আজ ব্রহ্মজাল সুত্রটি পড়তে পড়তে ছোট্ট একটা মজার ঘটনা চোখে পড়ল। সেটা হচ্ছে এরকম-
অতীতে ভারতের মথুরা রাজ্যে (বর্তমান উত্তর প্রদেশের মথুরা জেলায়) পাণ্ডুরাজা একবার তিনটা মুক্তা মুঠোয় লুকিয়ে জ্যোতিষীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বলো তো আমার হাতে কী? জ্যোতিষী তা শুনে এদিক ওদিক তাকাল। সে দেখল একটা টিকটিকি একটা মাছিকে ধরতে গিয়েও ধরতে পারল না। মাছিটা মুক্ত হয়ে উড়ে গেল। জ্যোতিষী বলে উঠল, “মুক্ত”। রাজা মনে করলেন জ্যোতিষী হাতের মুঠোয় মুক্তা আছে বলে ধরতে পেরেছে। তাই রাজা আবার জিজ্ঞেস করলেন, কয়টা আছে? তখন একটা মোরগ তিনবার ডেকে উঠল। জ্যোতিষী তা শুনে বলে উঠল, “তিনটা”। এভাবে জ্যোতিষী চারদিকের লক্ষণ দেখে শুনে বললেও ঘটনাক্রমে সেটাই সঠিক হলো।
যদিও এরপর আর অর্থকথায় কিছু বলা হয় নি, কিন্তু আমরা অনুমান করে নিতে পারি, রাজা খুশি হয়ে সেই জ্যোতিষীকে খুব পুরস্কার দিয়েছিলেন। আর জ্যোতিষীও সঠিক গণনা করে দিতে পারে বলে যশখ্যাতি হয়েছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু ব্রহ্মজাল সুত্রমতে, এগুলো হচ্ছে তিরচ্ছানৰিজ্জা। অর্থাৎ সোজা বাংলায় নিম্নশ্রেণীর বিদ্যা। যেসব ভিক্ষু এমন বিদ্যা চর্চা করে লোকজনকে খুশি করে লাভ ও সুবিধা আদায় করে থাকে, বিভিন্ন জিনিসপত্র আদায় করে পরিভোগ ও ব্যবহার করে থাকে, সেটা হচ্ছে সেসব ভিক্ষুদের মিথ্যা জীবিকা। বিনয়মতে সেগুলো ভিক্ষুদের নিষিদ্ধ। তাই ভিক্ষুদের এধরনের নিম্নশ্রেণীর বিদ্যার চর্চা থেকে দূরে থাকা উচিত।
বন্দনা ভান্তে। অনেকদিন পর আপনার এই ওয়ালে আসলাম। উপরোক্ত উপসংহারটি আমার খুব পছন্দ হয়েছে আর সেটা হলো– বুদ্ধের ধর্ম্ম শিক্ষা প্রজ্ঞা ও করুণার। অবিদ্যা (মিথ্যাধারণা থেকে উৎপন্ন দুঃখ) থেকে মুক্তির। চিত্তকে বিশুদ্ধ পন্থায় চালনা করার সোপান। পাড়ি দেবার কাজে যা সকলের জন্য উন্মুক্ত।
সেখানে নরনারী-লিঙ্গভেদের সুযোগ নেই। আছে অকুশচিত্ত ও কুশলচিত্ত, সঠিক দৃষ্টি ও মিথ্যাদৃষ্টি, লোভ ও নির্লোভ, ভয় ও নির্ভয়ের প্রভেদ। বুদ্ধের এই শিক্ষা একান্তই চিত্ত ও আচরণগত অধ্যায়নের জন্য প্রজ্ঞাপ্ত। কোনো অবস্থাতেই লিঙ্গাধ্যায়নের জন্য নয়। আমিও তাই মনে করি। যদিও ভান্তের ব্যাখাটি পেলে আরো ভাল হতো সঠিকটা বুঝতে। সে যাই হোক ভান্তের কাছে আমার একটি বিনীত প্রশ্ন আছে আর তা হলো ঃ
বুদ্ধ ধর্ম মতে কর্ম ফল অখন্ডনীয়। একটু সুঁচ খড়ের গাদায় ফেললে যেমন সেটা খুজে পাওয়া কষ্টকর কিংবা বিমান থেকে একটা সুঁচ সাগরের বালুকারাশিতে নিক্ষেপ করলে যেমন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ঠিক মানব জন্মও নাকি সেরূপ দুস্পাপ্য কিছু। কারণ আমরা জন্মাবার পর থেকেই ভাল কাজের চেয়েও খারাপ কাজ বেশী করি। এবং এই খারাপ কাজের সঞ্চিত পাপরাশি আমাদের জন্মে জন্মে ভোগ করে যেতে হবে? বুদ্ধ কিংবা মোদ্গলায়ন ভান্তেও কর্মফল ভোগ করা থেকে রেহায় পায়নি। তাহলে আমার প্রশ্ন অঙ্গুলিমাল কেনো ৯৯৯ জন মানব হত্যা করেও সেই পাপের ফল ভোগ না করে অরহৎফল লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন?
বন্দনা ভান্তে।
আমার একটা প্রশ্ন।
আমরা মাংস খাই বলেইতো বাজারে মাংস বিক্রি হয়। ভিক্ষু শ্রামণেরা মাংস খাই বলেইতো মাংস পিন্ডদান দেওয়া হয়। আর এটাতো একটা ছোট বাচ্ছাও বুঝে মাংস আসে প্রাণী থেকে। তাহলে কি মাংস খাওয়া প্রাণীহত্যা সমর্থন করার মত নয়?