পেঁচা ও কাকের মধ্যে বিরোধের একটা খুব অদ্ভূত ঘটনা পড়লাম জাতকে। সেটা আছে পেঁচা জাতকে (২৭০ নং জাতক)।
তখন বুদ্ধ থাকতেন শ্রাবস্তীর জেতবনে। সেই সময়ে দিনের বেলায় কাকেরা পেঁচাদেরকে মেরে খেত। কিন্তু সূর্যাস্তের পর থেকে হতো পেঁচাদের রাজত্ব। তারা ঘুমন্ত কাকদের মাথা ছিন্ন করে মেরে ফেলত। জেতবনের পেছন দিকে এক বিহারে থাকত এক ভিক্ষু। সে প্রতিদিন উঠান পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখত উঠানের গাছতলায় পড়ে আছে বহু কাকের ছিন্ন মাথা। ব্যাপারটা সে ভিক্ষুদেরকে জানাল। ভিক্ষুরা তখন ব্যাপারটা বুদ্ধকে জানিয়ে জিজ্ঞেস করল, ভান্তে, কবে থেকে এই কাক ও পেঁচাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে?
বুদ্ধ বললেন, এই পৃথিবী সৃষ্টির আদিকাল থেকে। সেটা জানিয়ে তিনি অতীতের কাহিনী বর্ণনা করলেন এভাবে-
অতীতে আদিকালের মানুষেরা একত্রিত হয়ে একজনকে রাজা নির্বাচন করেছিল। (এই রাজার নাম জাতকে উল্লেখ না হলেও দীর্ঘনিকায়ের অগ্গঞ্ঞ সুত্র ইত্যাদি বহু সুত্রে তাকে মহাসম্মত রাজা নামে উল্লেখ করা হয়েছে।)
চারপেয়ে প্রাণিরাও একত্রিত হয়ে এক সিংহকে রাজা নির্বাচন করেছিল। মহাসাগরে মাছেরাও আনন্দ নামের এক মাছকে রাজা নির্বাচন করেছিল। তখন পাখিরা হিমালয়ের এক স্থানে একত্রিত হয়ে বলাবলি করতে লাগল, মানুষদের মাঝে রাজা দেখা যায়, চতুষ্পদী প্রাণি এবং মাছদেরও রাজা দেখা যায়। আমাদের মাঝে কিন্তু কোনো রাজা নেই। বিশৃঙ্খলভাবে চলা ঠিক নয়। আমাদেরও একজন রাজা দরকার। কাকে রাজা বানানো যায়?
তারা সেরকম পাখি খুঁজতে খুঁজতে একটা পেঁচাকে দেখে বলল, একেই আমাদের রাজা হিসেবে পছন্দ হয়েছে। এক পাখি তখন সবার অনুমোদনের জন্য তিনবার সেটা ঘোষণা করল। দুইবার ঘোষণার পরেও এক কাক চুপ করে ছিল। তৃতীয়বার ঘোষণা করা হলে কিন্তু সে আর চুপ করে থাকতে পারল না। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, একটু দাঁড়ান। এর মুখটাকে একটু দেখুন তো আপনারা। রাজা হতে যাচ্ছে, তাতেও তার মুখ এরকম। রেগে গেলে আরো কীরকম হবে একটু ভাবুন তো। এ রেগেমেগে তাকালেই তো আমরা হার্টফেল করে মারা যাব। একে রাজা করাটা আমার পছন্দ হচ্ছে না।
পেঁচা তখন উড়ে এসে কাককে তাড়া করল। সেই থেকে পেঁচা ও কাক পরস্পরের শত্রু হয়ে গেল। পাখিরা তখন একটা সোনার রাজহাঁসকে রাজা বানালো। আমাদের বোধিসত্ত্বই নাকি ছিলেন তখনকার সেই রাজহাঁস।
গুগলে সার্চ করে জানা গেল, কাক ও পেঁচার শত্রুতা এখনো রয়ে গেছে। পেঁচারা এখনো কাকের মাথা ছিঁড়ে মেরে ফেলে। এখনো কাকের মাথাহীন দেহ মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে, জীবনে পেঁচা দেখে নি এমন কাকের ছানাও পেঁচা দেখলেই বুঝতে পারে এ হচ্ছে চিরশত্রু!
https://www.capeandislands.org/post/crows-vs-owls-enemies-ordained-nature#stream/0 ওয়েবসাইটে একটা কাহিনীর উল্লেখ করেছেন লেখক। তিনি একটা জায়গায় গিয়েছিলেন যেখানে কাকেরা রাতে ঘুমাত। সেখানে তিনি দেখেছিলেন ৯টা কাকের মাথাবিহীন মৃতদেহ। দেখে বুঝা গিয়েছিল এটা হচ্ছে শিংওয়ালা পেঁচার কাজ। পেঁচারাই এভাবে রাতের অন্ধকারে কাকদেরকে ধরে ধরে মাথা ছিঁড়ে দিয়ে হত্যা করে।