আমি সবসময়ই বলেছি, গৃহীদের সুখের জন্য দুটো জিনিস দরকার। সেগুলো হচ্ছে টাকা-পয়সা এবং পুণ্য। আমার চাকরিকালীন সময়ে টাকা-পয়সা কীভাবে আয় করব, কতটুকু জমা করব, কতটুকু দান করব, কতটুকু ব্যয় করব সেসব বিষয়ে একদম অজ্ঞ ছিলাম। এখন ভাবি, এই বিষয়গুলো জানা থাকলে তখন বোধহয় এত দিশেহারা হতে হতো না। আসুন দেখি ত্রিপিটকে কী বলা আছে এব্যাপারে। এব্যাপারে গৃহীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আছে দীর্ঘনিকায়ের সিঙ্গালোবাদ সুত্রে। তবে আমি প্রথমে বলব অঙ্গুত্তর নিকায়ের দীর্ঘজাণু সুত্রের কথা (অ.নি.৮.৫৪)।
তখন দীর্ঘজাণু নামের এক গৃহী লোক বুদ্ধের সাথে দেখা করতে এসেছিল। তার প্রশ্ন ছিল, সাধারণ গৃহী লোকজন সংসারে স্ত্রী-পুত্রকন্যা নিয়ে বসবাস করে থাকে। তারা কীভাবে জীবন যাপন করলে বর্তমান জীবনেও সুখে কাটাতে পারবে? ভবিষ্যৎ জীবনও সুখকর হবে?
বুদ্ধ উত্তর দিয়েছিলেন, গৃহী ব্যক্তির বর্তমান জীবনের সুখের জন্য চারটা জিনিস দরকার। প্রথমত, তার মধ্যে পরিশ্রমের গুণ থাকতে হয়। অর্থাৎ সে যে পেশায় নিয়োজিত আছে সেই পেশায় দক্ষ হতে হয়, পরিশ্রমী হতে হয়। সেই পেশার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হয়, কখন কী করতে হবে না করতে হবে সেব্যাপারে উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন হতে হয়।
দ্বিতীয়ত তার মধ্যে সংরক্ষণের গুণ থাকতে হয়। অর্থাৎ সৎ উপায়ে কামানো টাকা-পয়সা, সম্পত্তি ইত্যাদি যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়, যাতে চোরডাকাতেরা নিয়ে যেতে না পারে, আগুনে যাতে পুড়ে না যায়, পানিতে যাতে ভেসে না যায় ইত্যাদি।
তৃতীয়ত তার ভালো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হয়। অর্থাৎ তার পাড়ায়, অথবা এলাকায় যারা উন্নতি করছে, যারা সৎ, শীলবান, বুদ্ধিমান, জ্ঞানী, তাদের সাথে উঠাবসা করতে হয়, মেলামেশা করতে হয়, আলাপ আলোচনা করতে হয়। তাদের থেকে দেখে দেখে নিজেকেও সেরকম শ্রদ্ধাবান হতে হয়, শীলবান হতে হয়, প্রজ্ঞাবান হতে হয়।
চতুর্থত, তার আয় বুঝে ব্যয় করতে হয়। তার খেয়াল রাখতে হয় যাতে তার ব্যয়গুলো আয়কে ছাড়িয়ে না যায়।
এভাবে কেউ যদি তার নিজ পেশায় বা কাজে দক্ষ হয়, তার ধনসম্পত্তি যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে, উন্নতিশীল সৎ জ্ঞানী ব্যক্তিদের সাথে ভালো বন্ধুত্ব রাখে, এবং আয় বুঝে ব্যয় করে চলে। তবেই সে জীবনে সুখী হতে পারে।
এখন আপনাদের জন্য প্রশ্ন রইল। এগুলোর উত্তর দিন। নিজেই জেনে যাবেন আপনি বুদ্ধের নির্দেশ মোতাবেক চলছেন কিনা।
- পেশাগত দক্ষতা: আপনি নিজ পেশায় দক্ষ হওয়ার জন্য কোনো কিছু শিখছেন কি? কোনো কোর্স করছেন কি? কোনো প্রশিক্ষণে আছেন কি?
- সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ: আপনার টাকা-পয়সা, জায়গাজমি, ঘরবাড়ি, জিনিসপত্র ইত্যাদির নিরাপত্তা ব্যবস্থা চেক করে দেখেছেন? চোরে নিয়ে যেতে পারবে না তো? আগুন লাগলেও নিরাপদ থাকবে তো? দুর্ঘটনা ঘটলেও নিরাপদ থাকবে তো? করোনার লকডাউন হলেও সহায়-সম্পত্তি সব ঠিক থাকবে তো?
- ভালো বন্ধুত্ব: আপনার বন্ধুবান্ধবের কথা একটু চিন্তা করুন। নিজ পেশায় উন্নতি করছে, সৎ, জ্ঞানী এমন বন্ধু আপনার আছে তো? যদি না থাকে তাহলে সেরকম বন্ধু খুঁজে নেয়ার চেষ্টায় নেমেছেন কি? আর যদি থাকে, তাহলে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন কি?
- আয়ব্যয়: আপনার মাসিক আয়ব্যয়ের হিসাবের খাতা আছে তো? আপনার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে না তো?
আপনার উত্তরগুলো যদি নাবোধক হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার সেক্ষেত্রে একটু ঘাটতি আছে। দয়া করে দ্রুত পদক্ষেপ নিন যাতে সেগুলো হ্যাঁবোধক উত্তর আসে। আর এই চারটি ক্ষেত্রে এমন পর্যালোচনা একবার করলে হবে না। সারাজীবন ধরে নিজেকে এমন পর্যালোচনা করে যেতে হবে। নিজেকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এভাবেই বৌদ্ধ আদর্শে সুশৃঙ্খল একটা জীবন গড়ে তুলুন। ছন্নছাড়া উচ্ছৃঙ্খল আদর্শহীন জীবনে কোনো সুখ আসে না। সমৃদ্ধি আসে না। বুদ্ধের এই নির্দেশনা মোতাবেক বৌদ্ধ আদর্শে জীবন গড়ে তুলুন। সুখ আসবেই।
ভান্তে, মানুষ সৃষ্টি ও universe সৃষ্টি রহস্যকি আমাদের ধর্মে আছে?
সাধু সাধু সাধু ভান্তে,আমি কর্মজীবনে প্রবেশ করে দেখলাম। আয় ব্যয়ে সমন্বয় থাকলে অবশ্যই উন্নতি হয়। কিন্ত বাদ সাজে পরিবারের কারোর কোন রোগ হলে সঞ্চয় বলতে থাকে না তখন। আসলে যে কোন রোগ ব্যাধির মতো কোন শত্রু নেই। রোগ থাকলে যে কোন পরিশ্রম করা যায় না, রোগ ব্যাধি না থাকলে অল্পতেও সন্তুষ্ট হওয়া যায়। যে নীরোগী জ্ঞান থাকলে সেই সবচেয়ে সুখী।
বন্দনা ভান্তে। প্রথম সঙ্গায়ণে কোন অরহত ভিক্ষুণীকে কি প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল? আমার জানার জন্য প্রশ্ন। যদি দিয়ে থাকেন উনার নাম কি? আর যদি না দিয়ে থাকে, তাহলে কেন?
জ্বি না। সেখানে মহাকশ্যপ ভান্তে ৫০০ জন ভান্তেকে নির্বাচিত করেছিলেন সঙ্গীতিতে অংশগ্রহণের জন্য। বর্ষাবাসের তিনমাস সঙ্গায়ন হয়েছিল। অন্যান্য ভিক্ষুদেরকে তখন সেখানে বর্ষাবাস যাপন করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল।
কেন সুযোগ দেয়া হয় নি? ভিক্ষুণীদের আটটি গুরুধর্মের মধ্যে একটা হচ্ছে ভিক্ষুণীরা ভিক্ষুদেরকে কোনো ধরনের ধর্মোপদেশ দিতে পারে না, শিক্ষা দিতে পারে না, আদেশ দিতে পারে না, উপদেশ দিতে পারে না। ভিক্ষুসঙ্ঘই তাদেরকে পরিচালনা করে থাকে। তাই ভিক্ষুসঙ্ঘের নীতিনির্ধারণী কোনো সভায় তাদেরকে ডাকার প্রশ্নই আসে না।