এই ফটোগ্রাফারের নাম হচ্ছে পাবলো। ইণ্ডিয়ান। তিনি নাকি চাকমা রাজার কাজিন। আমি বললাম, আপনি চাকমা না হলে চাকমা রাজার ভাই হন কীকরে? তিনি বললেন, চাকমা রাজা আগে কলকাতার বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। সেই সূত্রে চাকমা রাজা হচ্ছেন অর্ধেক বাঙালি! ভালো যুক্তি।
তিনি এসেছেন চাকমাদের প্রাচীন পিনন খাদি, লেই ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পগুলো ক্যামেরাবন্দি করতে। কিন্তু চাকমারা থাকে বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে মংডু ভুসিদং শহরে। সেখানে বিদেশীদের যাওয়া নিষেধ। কীভাবে সেখানে যেতে চান উনি? তিনি বললেন, পার্বত্য চট্টগ্রামেও একই অবস্থা। বিদেশিরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকতে পারে না। তিনি নাকি তিন বছর ধরে আর্মিদের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয় নি। পরে চাকমা রাজা কাকে কাকে ধরে আর্মিদের কাছ থেকে অনুমতি সংগ্রহ করে দেন। এখানে তো চাকমা রাজা নেই। কাকে ধরবেন তিনি?
পরে সেয়াদ বুদ্ধি দিলেন, আপনি ম্রাউ যাবেন। সেখানে এমনিতেই বিদেশিরা যেতে পারে। সেখানে টুরিস্ট গাইডদেরকে বলবেন চাকমা গ্রামে নিয়ে যেতে। তার আশেপাশে চাকমা গ্রাম আছে। সেগুলোতে ঘুরেটুরে দেখতে পারবেন। পাবলো অবশ্য চেয়েছিলেন যেন কোনো চাকমা ভিক্ষু তার সাথে যায়। কোথাও কোনো বিপদ হবে না কে বলতে পারে? বার্মার সরকারের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। কয়েক মাস আগে রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে ধরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি তা নিয়ে চিন্তিত।
কিন্তু সেয়াদ আমাদের কাউকে যেতে দিলেন না। পাবলো দেখতে বাঙালিদের মতো। বার্মিজ ভাষাও পারে না। রাখাইনদের সাথে বাঙালিদের জাতিগত সংঘাত চলছে রাখাইনে। পরিবেশ থমথমে। এখন সেখানে যদি দেখা যায় কোনো বাঙালি চেহারার লোক এসে চাকমা ভিক্ষুদের সাথে ঘুরছে, চাকমাদের গ্রামে যাচ্ছে, তাহলে আর বলা লাগবে না। কানাঘুষো শুরু হবে। সরকারের কানে যাবে। চাকমারা এমনিতেই এখানে রাখাইন ও বাঙালি উভয়ের দ্বারা নিপীড়িত হয়ে থাকে। তাতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
পরে পাবলো একাই গেলেন ম্রাউ শহরে। সেয়াদের পরামর্শ মতো চাকমাদের গ্রামে গেলেন। তাকে দেখলাম ফুলেল সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। যাক। ব্যাপারটা ভালোয় ভালোয় কেটে গেল। আপাতত। আপাতত বলছি কারণ তিনি আবারো যেতে চান। এবার যেতে চান একদম মংডু ও ভুসিদং শহরে। যেখানে যাওয়া নিষেধ সেখানে কেন যে লোকজন যেতে চায় আমি বুঝি না।