আমাদের ভিক্ষুদের মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আগে থেকেই চলে আসছে। আমাদের গুরুপরম্পরায় চলে আসছে বলে আমরাও সেগুলো নির্দ্বিধায় অনুসরণ করে যাই। ধর্মবিনয়ের অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলোতে বিভিন্ন প্রবীণ ভান্তেদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন ভিন্ন। তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মোতাবেক তাদের শিষ্যদের সেগুলো শিখিয়ে গেছেন। শিষ্যরাও সেভাবেই তাদের গুরুদের আচরিত বিষয়গুলো অনুসরণ করে আসছে। এভাবে সেটার ধারাবাহিকতা চলে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। এই ব্যাপারটা শুধু এখন নয়, আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
কিন্তু একজন সত্যসন্ধানী হিসেবে আমার প্রশ্ন জাগে, এই যে আমরা প্রচলিত নিয়ম অনুসারে চলছি সেগুলো কি সবই সঠিক? কীভাবে বুঝব সেগুলো সঠিক কিনা? ত্রিপিটকে কি কোনো উপায় বলে দেয়া আছে?
আছে, আছে। বিনয়পিটকের চূলবর্গের একদম শেষের দিকে প্রথম দুটো সঙ্গীতির বর্ণনা যোগ করে দিয়েছেন আমাদের প্রাচীন সঙ্গীতিকারক ভান্তেগণ। সেখানে সপ্তশতকস্কন্ধ নামের অধ্যায়ে দ্বিতীয় সঙ্গীতির কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় সঙ্গীতি কেন হলো, কীভাবে সমাধা হলো সব বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গীতিতে ঠিক এই বিষয়টিই উঠে এসেছিল। সেখানে প্রশ্ন উঠেছিল, “আচার্য বা উপাধ্যায় যেরকম করে গিয়েছেন আমরাও সেরকমই করব” সেটা কি ঠিক? তখন সব্বকামী স্থবির ছিলেন সঙ্গীতির উত্তরদাতা। তিনি বলেছিলেন, “একচ্চো কপ্পতি, একচ্চো ন কপ্পতী” (চূলৰগ্গ.৪৫৭)। অর্থাৎ সেটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠিক, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঠিক নয়।
এখন কোন কোন ক্ষেত্রে গুরু বা আচার্যদেরকে অনুসরণ করা ঠিক? কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে অনুসরণ করা উচিত নয়? সেটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে চূলবর্গ অর্থকথা বলে, “একচ্চো কপ্পতীতি ইদং ধম্মিকং আচিণ্ণং সন্ধায ৰুত্তং” (চূলৰগ্গ.অ.৪৫৭)। অর্থাৎ, তাদের যেসব বিষয়গুলো “ধম্মিকং আচিণ্ণং” বা ধর্মবিনয়সম্মত সেগুলো অনুসরণ করাটা ঠিক আছে, কিন্তু যেসব বিষয় ধর্মবিনয়সম্মত নয় সেগুলো অনুসরণ করা ঠিক নয়।
কী সুন্দর সমাধান! এর থেকে অসাধারণ উত্তর আর কী হতে পারে বলুন তো?