বুদ্ধের আমলে পিলিন্দৰচ্ছ পরিব্রাজক ছিলেন। তিনি চূলগান্ধারী বিদ্যা শিক্ষা করে আকাশে উড়তে পারতেন এবং অন্যদের মনের খবর বলে দিতে পারতেন। কিন্তু বুদ্ধ উৎপন্ন হওয়ার পর থেকে তার সেই বিদ্যা আর কাজ করত না। তাই তিনি বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্যা নিয়েছিলেন মহাগান্ধারী বিদ্যা শেখার আশায়। কিন্তু বুদ্ধ কি তাকে মহাগান্ধারী বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন? না তো। বুদ্ধ বরং তাকে তার চরিত্রের অনুরূপ ভাবনার বিষয়ই বলে দিয়েছিলেন। তিনি বুদ্ধের উপদেশ অনুসারে ভাবনা করে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই অর্হৎ হয়েছিলেন। এভাবে বিদ্যাধরেরাও বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্যা নিয়ে অর্হৎ হয়েছিলেন।
এখন বর্তমানের বিদ্যাধরেরা নাকি মার্গফললাভী ও অর্হৎ হয়েও বিদ্যার লাইনে থাকেন। তাদের অনুসারীদেরও সেব্যাপারে শিক্ষা দেন। সেটা শুধু গুরুবাদীরাই বলেন না, মায়ানমারে যারা বিদ্যাধরের লাইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারাও একথা বলে থাকেন। আচ্ছা, এব্যাপারে ত্রিপিটক কী বলে? আসুন তাহলে আপনাদেরকে বঙ্গীস স্থবিরের কাহিনী শোনাই।
বঙ্গীস এক ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করে এক বিদ্যা শিক্ষা করেছিল। সেই বিদ্যার বলে সে মৃত মানুষের মাথার খুলিতে টোকা দিয়ে বলে দিতে পারত- এই ব্যক্তি মরে নরকে গেছে, এই ব্যক্তি মরে ইতরপ্রাণিকুলে জন্মেছে, এই ব্যক্তি মরে মানুষ হয়ে জন্মেছে, এই ব্যক্তি মরে দেবলোকে জন্মেছে। এই বিদ্যার দ্বারা সে লোকজন থেকে খুব টাকাপয়সা কামাত। ভালো বৈদ্য হলে যেরকম হয় আর কি!
একদিন সে কৌতুহলবশত বুদ্ধের সাথে দেখা করতে গেল। বুদ্ধ তাকে পরীক্ষা করার জন্য কয়েকটা মাথার খুলি আনালেন। বঙ্গীস তখন একটা খুলিতে টোকা দিয়ে বলল, এই ব্যক্তি নরকে জন্মেছে। বুদ্ধ তার কথা শুনে সাধু সাধু বলে সাধুবাদ দিলেন। এভাবে বঙ্গীসের প্রত্যেকটি উত্তরে বুদ্ধ সাধু সাধু বললেন। কিন্তু শেষের মাথার খুলিতে টোকা দিয়ে বঙ্গীস আর কিছু বলে না। সেটা ছিল পরিনির্বাপিত এক অর্হতের মাথার খুলি। বুদ্ধ বললেন, কী হলো বঙ্গীস? এ কোথায় জন্মেছে জানো না নাকি? বঙ্গীস স্বীকার করতে বাধ্য হলো সে এই মাথার খুলির ব্যাপারে জানে না। বুদ্ধ বললেন, আমি তো জানি সে কোথায় জন্মেছে। তখন বঙ্গীস বলল, তাহলে আমাকে এই মন্ত্র দিন। বুদ্ধ বললেন, প্রব্রজ্যা না নিলে সেই মন্ত্র দেয়া যায় না।
তখন বঙ্গীস ভাবল, “এই বিদ্যা শিখলে আমি সারা জম্বুদ্বীপে সেরা হয়ে যাব।” তাই সে তার সতীর্থ ব্রাহ্মণদের বলল, “আমি এই মন্ত্র একটু শিখে নিই। তোমরা কয়েকদিন এখানেই থাক।” এই বলে সে বুদ্ধের কাছে প্রব্রজ্যা নিল। বুদ্ধ তাকে ভাবনার বিষয় হিসেবে ৩২ অশুচি আবৃত্তি করতে বলে দিলেন। সে ৩২ অশুচি আবৃত্তি করতে থাকল, “চুল, কেশ, নখ, দাঁত, চামড়া, মাংস …।” তার সতীর্থ ব্রাহ্মণেরা প্রতিদিন এসে খোঁজ নিত তার মন্ত্র শেখাটা কতদূর হলো। সে তাদেরকে বলত, এখনো শিখছি। তোমরা পরে এসো।
এভাবে ৩২ অশুচি আবৃত্তি করতে করতে কয়েকদিনের মধ্যেই সে অর্হৎ হয়ে গেল। এরপর যখন ব্রাহ্মণেরা খবর নিতে আসল, তখন সে বলল, “এখন তো আমার ফেরা অসম্ভব। তোমরা চলে যাও।” অর্হৎ হওয়ার আগে ও পরে বিদ্যাধরের আচরণ কীরকম হয় তা তো এখান থেকেই জানা যায়।
সে যতদিন মার্গফল লাভ করে নি ততদিন তার বন্ধুদেরকে পরে আসতে বলত। কিন্তু অর্হৎ হওয়ার পরে তখন সে তাদেরকে সরাসরি চলে যেতে বলেছে। মার্গফল বা অর্হত্ব পেলে আর্যব্যক্তিগণ এরকমই হন। তাদের এসব হীন বিষয়ের প্রতি আর আগ্রহ থাকে না।