বিদ্যাধররা ফেসবুকেও অনেকগুলো পেজ খুলে তাদের বিদ্যার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে তারা সেখান থেকে রেফারেন্স দেয়। এদের মধ্যে একটা পেজের নাম দেখলাম শোয়েয়াংগ্য দীক্ষা। আমি সেখানে একটু দেখলাম তারা ত্রিবিদ্যা বলতে কী বোঝে। দেখলাম তারা সেখানে ত্রিবিদ্যা বলতে বুঝিয়েছে পূর্বজন্মস্মৃতিজ্ঞান, পরচিত্তবিজননজ্ঞান, এবং দিব্যচক্ষু-দিব্যশ্রোত জ্ঞানকে।
অথচ পারাজিকা অর্থকথা বলে, ত্রিবিদ্যা হচ্ছে পূর্বজন্মস্মৃতিজ্ঞান, দিব্যচক্ষুজ্ঞান এবং আসবক্ষয় জ্ঞান (পারা.অ.১৯৯)। থেরগাথা, থেরীগাথাগুলোতে দেখা যায় প্রাচীন ভান্তেগণ অর্হৎ হয়ে যে গাথাগুলো ভাষণ করেছিলেন তাতে ত্রিবিদ্যা প্রাপ্ত হওয়া ছিল কমন জিনিস। সেখানেও এই ত্রিবিদ্যা বলতে পূর্বজন্মস্মৃতিজ্ঞান, দিব্যচক্ষুজ্ঞান এবং আসবক্ষয় জ্ঞানকেই বুঝানো হয়েছে (থের.অ.১.২৪)। তাহলে আমরা কোনটাকে ত্রিবিদ্যা হিসেবে মানব? বিদ্যাধরদের ত্রিবিদ্যাকে, নাকি ত্রিপিটকের ত্রিবিদ্যাকে?
এরপর তারা বলেন, “ত্রিবিদ্য বা তিনটি বিদ্যা জ্ঞানের অধিকারী হলে তাদেরকে বিদ্যধর বা উইজ্জ্যাধর বলা হয়।” কী ভয়ংকর কথা! তাহলে বুদ্ধসহ সকল ত্রিবিদ্যালাভী অর্হৎগণ বিদ্যাধর হয়ে গেলেন? এখানে আমার পোস্টে তাদের কয়েকজনের কমেন্টস পড়ে মনে হয় সত্যিই তারা বুদ্ধকেও বিদ্যাধর মনে করেন!
এরপর তারা দাবি করেন, “এই তিনটি বিদ্যা জ্ঞান লাভে সন্তুষ্ঠ না থেকে যারা বুদ্ধ প্রদর্শিত উইপাস্সানা বা বিদর্শন ধ্যান সাধনা করে মার্গফল প্রাপ্ত হন তাদের কে অার্য বিদ্যাধর বা অারিয়া উইজ্জাধর বলে।”
আর্যবিদ্যাধর আবার কী জিনিস? ভেবে দেখুন তো, ব্রাহ্মণ হোক, ক্ষত্রিয় হোক, চণ্ডাল হোক, বিদ্যাধর হোক, যদি সে মার্গফল পায়, তাকে বলা হয় আর্য বা আর্যপুদগল বা আর্যশ্রাবক। ত্রিপিটকের কোথাও কি বলা হয়েছে অর্হত্ব বা মার্গফল পেয়ে ব্রাহ্মণ থেকে আর্যব্রাহ্মণ হয়েছে? ক্ষত্রিয় থেকে আর্যক্ষত্রিয় হয়েছে? চণ্ডাল থেকে আর্যচণ্ডাল হয়েছে? বিদ্যাধর থেকে আর্যবিদ্যাধর হয়েছে? উপালি ভিক্ষু জাতে নাপিত ছিলেন। তিনি অর্হৎ হওয়ার পরে কি তাহলে আর্যনাপিত হয়েছেন? মহাপ্রজাপতি গৌতমী ছিলেন শাক্যদের রাণি। তাহলে তিনি কি আর্যরাণি হয়েছিলেন? বুদ্ধ ছিলেন শাক্যবংশের। তাহলে তিনি কি আর্যশাক্য হয়েছিলেন? অথবা তিনি ছিলেন রাজপুত্র। তাহলে কি বুদ্ধত্ব লাভের পরে তিনি আর্যরাজপুত্র হয়েছেন?
আর্যবিদ্যাধর শব্দটা ত্রিপিটকে বা অর্থকথায় থাকলে তবুও মানা যেত। কিন্তু তাদের রামবুদ্ধের মতোই ঐ শব্দটিও ত্রিপিটকের কোনোখানে নেই। এটা হচ্ছে তাদেরই আবিষ্কার মাত্র।
তাহলে দেখুন ত্রিপিটকের ত্রিবিদ্যা এবং বিদ্যাধরদের ত্রিবিদ্যার মধ্যে কত তফাত। এভাবেই তারা তাদের বিদ্যার উপরে ধর্মের লেবাস পরিয়ে সেটা বৌদ্ধধর্ম বলে বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এখন কাকে বিশ্বাস করা যায় বলুন তো? বিদ্যাধরদের চালানো পেজকে বিশ্বাস করা উচিত নাকি ত্রিপিটকধর মিনগুন সেয়াদ ও অন্যান্য সঙ্গীতিকারক ভান্তেদের অনুমোদিত ত্রিপিটক, অর্থকথা ও টীকা গ্রন্থগুলোকে বিশ্বাস করা উচিত? আপনাদের কি মনে হয়?