আমি অনেক আগে বিদ্যাধরদের ব্যাপারে গবেষণা করেছিলাম। বিদ্যাধরদের নিয়ে আমারও কৌতুহল ছিল। তাদের বিদ্যার রহস্যময়তার দিকে আমারও ঝোঁক ছিল। কিন্তু আমি মনে করতাম ঝাঁপ দেয়ার আগে দেখা দরকার কোথায় ঝাঁপ দিতে যাচ্ছি। সেটার চর্চা করাটা আসলে কতটুকু বিনয়সম্মত বা ধর্মসম্মত। সেই গবেষণার ফল হচ্ছে এই লেখা। অনেক আগের লেখা হলেও ব্যাপারটা নতুন করে জানিয়ে দিলাম। পড়ে দেখুন। জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নিন, বিদ্যাধরদের পথ ধরবেন নাকি সোজা বুদ্ধের পথ ধরবেন।
বিদ্যাধর (তান্ত্রিক বা মন্ত্রধর) কারা?
—————————————-
যারা বিভিন্ন বিদ্যা বা মন্ত্র জপ করে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা দেখায় তারাই হচ্ছে বিদ্যাধর।
বিদ্যাধররা (তান্ত্রিক বা মন্ত্রধররা) কী করতে পারে?
——————————————————-
বিদ্যাধরদের অলৌকিক শক্তির ব্যাপারে খুদ্দকনিকায়ের পটিসম্ভিদামগ্গ গ্রন্থে বলা হয়েছে, “বিদ্যাময় অলৌকিক শক্তি (ঋদ্ধি) কোনগুলো? বিদ্যাধর বিদ্যা জপ করে আকাশে উড়ে যায়, আকাশে হাতি দেখায়, ঘোড়া দেখায়, রথ দেখায়, সেনাবাহিনী দেখায়, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ধরনের রণসজ্জা দেখায়। এই হচ্ছে বিদ্যাময় অলৌকিক শক্তি।”
পারাজিকা অর্থকথার ১৭২ নং অনুচ্ছেদে কাউকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বিদ্যাময় প্রচেষ্টার উল্লেখ আছে। সেখানে বলা হয়েছে, “সংক্ষেপে বিদ্যাময় প্রচেষ্টা হচ্ছে হত্যার উদ্দেশ্যে বিদ্যা জপ করা।” আরো বলা হয়েছে, “বিদ্যাময় প্রচেষ্টা কোনগুলো? যাদুকর (আথব্বণিক) যাদুবিদ্যা প্রয়োগ করে নগরে অথবা সংগ্রামে প্রতিপক্ষের সৈন্য অথবা শত্রুদের মাঝে দুর্যোগ আনয়ন করে, উপদ্রব উৎপন্ন করে, রোগ উৎপন্ন করে, প্রচণ্ড মাথাব্যথা (পজ্জরক) উৎপন্ন করে, ক্ষুধা ও পিপাসা (সূচিকা) সৃষ্টি করে, কলেরা রোগের সৃষ্টি করে, এবং লোকজনকে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ছুটোছুটি করায়।” এভাবে বিদ্যাময় প্রচেষ্টার মাধ্যমে যাদুকর ও বিদ্যাধরদের হাতে নিহত হওয়ার বহু কাহিনীর উল্লেখ প্রাচীন অর্থকথাগুলোতে রয়েছে।
অপদান গ্রন্থে দেখা যায়, কেশরপুষ্প স্থবির (কেসর-পুপ্ফিয-থেরো) একত্রিশ কল্প আগে বিদ্যাধর হয়ে হিমালয়ে অবস্থান করতেন।তিনকনকচাঁপা স্থবির (তিকণিকার-পুপ্ফিয-থেরো) অতীতে সুমেধ বুদ্ধের আমলে বিদ্যাধর ছিলেন। তিনি আকাশে উড়ে যেতে পারতেন অবলীলায়।
মিলিন্দপ্রশ্ন গ্রন্থে মিলিন্দরাজা পরিত্রাণ (পরিত্ত) কতটুকু কার্যকর সেব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তখন নাগসেন ভান্তে পরিত্রাণ বা মন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক বিদ্যাধরের কাহিনী বলেছিলেন এভাবে,
“মহারাজ, আপনি শুনেছেন কি, এক দানব তার স্ত্রীকে একটা বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে সেই বাক্সটা গিলে পেটের মধ্যে রেখে দিয়ে সুরক্ষিত রাখত। তখন এক বিদ্যাধর সেই দানবের মুখ দিয়ে প্রবেশ করে সেই স্ত্রীর সাথে মিলিত হলো। দানব তা জেনে তাড়াতাড়ি সেই বাক্সকে বমি করে বের করে খুলে দেখল। বাক্সটা খোলার সাথে সাথেই বিদ্যাধর পালিয়ে গেল।” “হ্যাঁ, ভান্তে। শুনেছি। সেই কাহিনী তো দেবলোকসহ সারা জগতে প্রসিদ্ধ।” “মহারাজ, সেই বিদ্যাধর কি পরিত্রাণ বা মন্ত্রের বলে সেই বিপদ থেকে মুক্ত হয় নি?” “হ্যাঁ, ভান্তে।” “মহারাজ, একারণেই পরিত্রাণবল বা মন্ত্রবল আছে।”
নাগসেন ভান্তে এরপর আরেকজন বিদ্যাধরের কাহিনী বলেছিলেন এভাবে, “মহারাজ, আপনি শুনেছেন কি, অন্য এক বিদ্যাধর বারাণসীরাজার অন্দরমহলে রাণির সাথে মিলিত হয়েছিল, কিন্তু ধরা পড়ার সাথে সাথেই মন্ত্রবলে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল?” “হ্যাঁ, ভান্তে, শুনেছি।” “মহারাজ, সেই বিদ্যাধর কি পরিত্রাণ মন্ত্রের বলে সেই বিপদ থেকে মুক্ত হয় নি?” “হ্যাঁ, ভান্তে।” “মহারাজ, একারণেই পরিত্রাণ বা মন্ত্রের বল আছে।”
আবার বোধিসত্ত্বের সাথে দেবদত্তের অতীত জন্মগুলোর তুলনার ক্ষেত্রে মিলিন্দরাজা একটা কাহিনী বলেছিলেন যেখানে দেবদত্ত হয়েছিলেন বারাণসী রাজার পুরোহিতের পুত্র, বোধিসত্ত্ব হয়েছিলেন হীন চণ্ডাল জাতির এক বিদ্যাধর। তখন বোধিসত্ত্ব বিদ্যা জপ করে অকালে গাছে আম ধরিয়েছিলেন। এই হচ্ছে বিদ্যাধরদের কাহিনী।
বুদ্ধের আমলে ভিক্ষুরা বিদ্যা বা তন্ত্রমন্ত্রের চর্চা করতেন কি?
——————————————————————
বুদ্ধ এবং তার অর্হৎ শিষ্যরা অতীতে বহুজন্মে বিদ্যাধর হয়েছিলেন, কিন্তু সেটা হচ্ছে তাদের অতীত জন্মের কথা। তখন তারা সাধারণ পৃথকজন ছিলেন। তাই তারা এমন হীনবিদ্যার চর্চা করেছিলেন। সাধারণ পৃথকজনেরাই এমন হীনবিদ্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু বুদ্ধ এবং আর্যশ্রাবকেরা কখনোই এমন হীনবিদ্যাকে প্রশ্রয় দেন নি। শেষজন্মে বুদ্ধ ও তার আর্যশ্রাবকগণ কেউ এমন বিদ্যা বা তন্ত্রমন্ত্রের চর্চা করতেন বলে ত্রিপিটকে দেখা যায় না।
বেয়াড়া ছয়দলীয় ভিক্ষুরা বিদ্যা বা তন্ত্রমন্ত্র শিক্ষা করত
———————————————————-
প্রকৃতপক্ষে অঙ্গবিদ্যা, বাস্তুবিদ্যা, তন্ত্রমন্ত্র, ভাগ্য গণনা, স্বপ্নতত্ত্ব, ভবিষ্যৎ গণনা ইত্যাদিকে বুদ্ধ “তিরচ্ছানৰিজ্জা” বা হীনবিদ্যা নামে অভিহিত করেছেন। এই তিরচ্ছানৰিদ্যা সম্বন্ধে বিনয় পিটকের চূলবর্গের ক্ষুদ্রবস্তু স্কন্ধের ২৮৭ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে এভাবে:
“সেই সময়ে ছয়দলীয় ভিক্ষুরা হীনবিদ্যা শিক্ষা করত। মানুষেরা [তা জেনে] ক্ষুদ্ধ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠল, রেগে উঠল, “এরা যেন কামভোগী গৃহী!” ভগবানকে ব্যাপারটা জানানো হলো। [তখন ভগবান এই শিক্ষাপদ জারি করলেন,] “ভিক্ষুগণ, হীনবিদ্যা শিক্ষা করা উচিত নয়। যে তা শিক্ষা করবে তার দুক্কট অপরাধ।”
সেই সময়ে ছয়দলীয় ভিক্ষুরা হীনবিদ্যা শিক্ষা দিত। মানুষেরা [তা জেনে] ক্ষুদ্ধ বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠল, রেগে উঠল, “এরা যেন কামভোগী গৃহী!” ভগবানকে ব্যাপারটা জানানো হলো। [তখন ভগবান এই শিক্ষাপদ জারি করলেন,] “ভিক্ষুগণ, হীনবিদ্যা শিক্ষা দেয়া উচিত নয়। যে তা শিক্ষা দেবে তার দুক্কট অপরাধ।””
ব্যাপারটা একটু ভালো করে চিন্তা করে দেখুন। সেই ছয়দলীয় ভিক্ষুরা হীনবিদ্যা শিক্ষা করছে বা শিক্ষা দিচ্ছে জেনে জনগণ খুব ত্যক্তবিরক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং নিন্দা করছিল যে এগুলো তো পঞ্চকামগুণ ভোগী গৃহীদের কাজ। কেন ভিক্ষুরা এগুলো শিক্ষা করছে এবং শিক্ষা দিচ্ছে? কেন তারা ভিক্ষুদের অযোগ্য কাজ করছে? তখন ভগবান সেই হীনবিদ্যাগুলো শিখতে ভিক্ষুদেরকে মানা করে দিয়ে বিনয়বিধান প্রজ্ঞাপ্ত করলেন। বুদ্ধের আমলেও ছয়দলীয় ভিক্ষুরা এমন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত ছিল, বর্তমানেও কিছু ভিক্ষু সেই বুদ্ধনিন্দিত পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে, পথভ্রষ্ট ছয়দলীয় ভিক্ষুদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করছে। আপনারা কি বুদ্ধের পথ অনুসরণ করবেন, নাকি ছয়দলীয় বেয়াড়া ভিক্ষুদের পথ অনুসরণ করবেন, ভেবে দেখবেন।
কোনগুলো হীনবিদ্যা?
————————-
সেগুলো কি ত্রিপিটকে উল্লেখ আছে? অবশ্যই উল্লেখ আছে। ত্রিপিটকের দীর্ঘনিকায়ের শ্রামণ্যফল সুত্রের অনেকগুলো অনুচ্ছেদে এমন হীনবিদ্যার লম্বা একটা তালিকা দেয়া আছে। এত লম্বা তালিকাটা এখানে না দিয়ে আমি কেবল শ্রামণ্যফল সুত্রের ২০৮ নং অনুচ্ছেদের অনুবাদটি সংক্ষেপে দিয়ে দিলাম যেখানে ভগবান বলেছেন,
“কোনো কোনো শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ [দায়কদের] শ্রদ্ধাভরে দেয়া খাদ্যে জীবনধারণ করেও মিথ্যাজীবিকা দ্বারা, হীনবিদ্যা দ্বারা নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে, যেমন- অঙ্গবিদ্যা, হস্তরেখা বিচার, লক্ষণবিদ্যা, স্বপ্নতত্ত্ব, ভাগ্য গণনা, ঝাঁড়ফুক, তন্ত্রমন্ত্র, বাস্তুবিদ্যা, আয়ু ভবিষ্যদ্বাণী করা, কোষ্ঠী বানানো, তাবিজ কবচ দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু একজন আদর্শ ভিক্ষু এধরনের মিথ্যা জীবিকা হতে, এধরনের হীনবিদ্যা হতে বিরত থাকে।”
পাঠক, দয়া করে খেয়াল করুন এই অঙ্গবিদ্যা, তাবিজ কবচ দেওয়া, ঝাঁড়ফুক ইত্যাদিকে ভগবান বুদ্ধ দুটো ক্যাটাগরিতে ফেলেছেন। তিনি এগুলোকে মিথ্যাজীবিকাও বলেছেন, হীনবিদ্যাও বলেছেন। বর্তমানে এধরনের হীনবিদ্যা চর্চাকারী কোনো কোনো ভিক্ষু আত্মপক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্যে বলে থাকেন এগুলো জীবিকা নির্বাহের জন্য নয়, কেবলমাত্র বুদ্ধশাসনের হিতের জন্য, জনগণের মঙ্গলের জন্য, অথবা নিজের পারমী পূরণের জন্য। তারা যাই বলুক না কেন, এধরনের হীনবিদ্যা থেকে অর্জিত যেকোনো জিনিস মিথ্যাজীবিকার অন্তর্ভুক্ত, বিনয়বহির্ভূত এবং জনসাধারণের নিন্দনীয়। কোনো শীলবান ভিক্ষুই বুদ্ধ কর্তৃক নিষিদ্ধ এধরনের হীনবিদ্যাতে লিপ্ত হতে পারে না। সৎদেবতারাও এধরনের মিথ্যাজীবিকাধারী ভিক্ষুদেরকে দূর থেকেই বর্জন করেন।
চুলগান্ধারী ও মহাগান্ধারী বিদ্যা
————————————
আর কোনো কোনো ভিক্ষু উল্লেখ করেছেন, চূলগান্ধারী এবং মহাগান্ধারী বিদ্যার কথা ত্রিপিটকেও স্বীকৃত হয়েছে এবং দীর্ঘনিকায়ের কেবট্ট সুত্রে আছে। আমি সুত্রটা পড়ে বুঝতে পারলাম তাদের এমন প্রচারণা সাধারণ ধর্মমনা লোকজনকে ধোঁকা দেয়ার প্রচেষ্টা মাত্র। কেবট্ট সুত্রে অবশ্যই ভগবান বুদ্ধ এমন বিদ্যার কথা আছে বলে স্বীকার করেছেন, কিন্তু তিনি কি সেগুলোর অনুমোদন করেছেন, নাকি নিন্দা করেছেন? আসুন দেখি, মূল কেবট্ট সুত্রে কী বলা হয়েছে। কেবট্ট সুত্রে (দীর্ঘনিকায়ের ৪৮৪ নং অনুচ্ছেদে) বলা হয়েছে,
( পোস্ট লম্বা হয়ে যাবে, তাই পালি কথাগুলো দিলাম না, কেবল অনুবাদগুলো দিলাম।)
[ভগবান বুদ্ধ কেৰট্ট নামক এক গৃহপতিপুত্রের প্রশ্নের উত্তরে বলছেন: ] “হে কেবট্ট, ঋদ্ধিময় অলৌকিক ঘটনা কোনগুলো? এখানে কোনো কোনো ভিক্ষু অনেক ধরনের ঋদ্ধি বা অলৌকিক শক্তিধারী হয়। সে একজন থেকে অনেকজন হয়, অনেকজন হয়ে আবার একজন হয়; আবির্ভূত হয়, অদৃশ্য হয়; দেয়াল, পর্বত ভেদ করে যায় অবলীলায়; পৃথিবীতে ডুব দেয়, ভেসে ওঠে; পানির উপরে হেঁটে যায়; পদ্মাসনে বসেই আকাশে পাখির মতো ভেসে যায়। চন্দ্রসূর্যকে নিজের হাত দিয়ে স্পর্শ করে; এমনকি দেবলোক ও ব্রহ্মলোকেও সশরীরে গমন করে।”
কোনো এক শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি সেই ভিক্ষুকে এমন অলৌকিক কাণ্ডকারখানা করতে দেখে। সে তখন অন্য একজন অশ্রদ্ধাবান অবিশ্বাসী ব্যক্তিকে বলে, “অলৌকিক শক্তিধর এই ভিক্ষু। আমি নিজে এই ভিক্ষুকে এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে দেখেছি, যেমন – সে একজন থেকে আরেকজন হয় … এমনকি দেবলোক ও ব্রহ্মলোকেও সশরীরে গমন করে।”
তখন সেই অশ্রদ্ধাবান অবিশ্বাসী ব্যক্তি সেই শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিকে বলে, “হে বন্ধু, ওর গান্ধারীবিদ্যা আছে। সেই গান্ধারীবিদ্যা দ্বারাই সেই ভিক্ষু সেই অলৌকিক ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।”
হে কেবট্ট, তুমি কি মনে কর সেই অশ্রদ্ধাবান অবিশ্বাসী ব্যক্তি সেই শ্রদ্ধাবান ব্যক্তিকে এমন কথা বলতে পারে? “হ্যাঁ ভান্তে, বলতে পারে।”
“হে কেবট্ট, অলৌকিক শক্তির এমন দোষ দেখেই আমি অলৌকিকশক্তি দেখানোর ব্যাপারে লজ্জিত ও বিরক্ত।”
এই হচ্ছে কেবট্ট সুত্রের সেই অংশ যেখানে ভগবান গান্ধারীবিদ্যার কথা বলেছেন। অর্থাৎ কোনো ভিক্ষু যদি ধ্যানজাত অলৌকিক শক্তি দেখায়, তাহলেও অবিশ্বাসীরা বলতে পারে যে, সেই ভিক্ষুর কোনো অলৌকিক শক্তি নেই, বরং সে সেই গান্ধারীবিদ্যার সাহায্যে, তন্ত্রমন্ত্রের সাহায্যে সেই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। এমন চতুর্থধ্যানজাত অলৌকিক শক্তি, যেটাকে বলা হয় উচ্চতর মানসিক অবস্থার সুফল, যেটা প্রচুর ধ্যানসমাধির চর্চার মাধ্যমেই কেবল লাভ হয়ে থাকে, শ্রামণ্যফল সুত্রে বুদ্ধ যেটাকে শ্রামণ্য জীবনের অনেকগুলো সুফলের একটি হিসেবে প্রশংসা করেছেন, সেটাকেই অবিশ্বাসীরা হীন গান্ধারীবিদ্যার সাথে তুলনা করে, অগ্রাহ্য করে, অবমূল্যায়ন করে। তাই বুদ্ধ অলৌকিক শক্তি নিয়ে মাতামাতি করতে উৎসাহী নন।
কিন্তু এই হীন গান্ধারীবিদ্যা কী জিনিস?
——————————————-
দীর্ঘনিকায়ের কেবট্ট সুত্রের টীকায় গান্ধারীবিদ্যার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে,
গন্ধারী তি চূল়গন্ধারী , মহাগন্ধারীতি দ্বে গন্ধারীৰিজ্জা। তত্থ চূল়গন্ধারী নাম তিৰস্সতো ওরং মতানং সত্তানং উপপন্নট্ঠানজাননৰিজ্জা। মহাগন্ধারী তম্পি জানাতি ততো উত্তরিপি ইদ্ধিৰিধঞাণকপ্পং যেভুয্যেন ইদ্ধিৰিধকিচ্চং সাধেতি। তস্সা কির ৰিজ্জায সাধকো পুগ্গলো তাদিসে দেসকালে মন্তং পরিজপ্পিত্ৰা বহুধাপি অত্তানং দস্সেতি , হত্থিআদীনিপি দস্সেতি , দস্সনীযোপি হোতি , অগ্গিথম্ভম্পি করোতি , জলথম্ভম্পি করোতি , আকাসেপি অত্তানং দস্সেতি। সব্বং ইন্দজালসদিসং দট্ঠব্বং।
এর বাংলা অনুবাদ হয় এরকম:
গান্ধারীবিদ্যা হচ্ছে দুই প্রকার: মহাগান্ধারী এবং ক্ষুদ্রগান্ধারী (চূলগন্ধারী)। তিন বছরের মধ্যে মারা গেছে এমন সত্ত্বরা কে কোথায় উৎপন্ন হয়েছে তা জানাটাই হচ্ছে ক্ষুদ্রগান্ধারীবিদ্যা। মহাগান্ধারীবিদ্যা দিয়ে উপরোক্ত বিষয় তো জানা যায়ই, সেটা বাদেও মন্ত্র জপ করে বহুধরনের অলৌকিক ঘটনা দেখানো যায়। সেই মহাগান্ধারী বিদ্যাধর সাধক মন্ত্র জপ করে একজন থেকে বহুজন হয়, বহুজন হয়ে একজন হয়; হাতি ঘোড়া ইত্যাদি দেখায়, অগ্নিস্তম্ভ সৃষ্টি করায়, জলস্তম্ভ সৃষ্টি করায়, আকাশে নিজেকে দৃশ্যমান করায়। এই সবই ইন্দ্রজাল বা মায়াবিদ্যা হিসেবে দেখতে হবে।
পাঠক, এবার আপনারা নিজেরাই বুঝে নিন, কোনটা হীনবিদ্যা, আর কোনটা হীনবিদ্যা নয়, কোনটা বুদ্ধের প্রশংসনীয় আর কোনটা বুদ্ধের প্রশংসনীয় নয়, কোনটা সুশীল ভিক্ষুদের পক্ষে শোভন আর কোনটা অশোভন, কোনটা বিনয়ে নিষিদ্ধ আর কোনটা অনুমোদিত। আপনারাই এর বিচার করুন।